Tuesday, June 3, 2025

সেই পিয়ানোটা 🎹

 গল্পের ভান্ডার /





গল্প:সেই পিয়ানোটা 🎹





🌾 গল্প: সেই পিয়ানোটা 🎹

১. শুরুর দিনগুলো
সাদিয়া ছোটবেলা থেকেই সুর ভালোবাসত। তার বাবা ছিলেন স্থানীয় একটি দোকানের কর্মচারী, মা গৃহিণী। তাদের ছোট্ট ঘরে কোনো দামি জিনিস ছিল না, কিন্তু দেয়ালের এক কোণে ধুলো মাখা একটা পিয়ানো রাখা ছিল — পুরনো, ভাঙা, এক পাশের কীবোর্ডগুলো বাজেই না।

পিয়ানোটা ছিল তার নানুর। একসময় অনেক বাজাতেন, কিন্তু তার মৃত্যুর পর সেটি পড়ে ছিল নীরবে। সাদিয়া প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে পিয়ানোতে হাত বুলাতো, টুকটাক চেষ্টা করত। যদিও সুর ঠিকমতো বের হতো না, তবুও সে থামত না। পাড়ার অনেকে বলত, “গরিবের মেয়ে হয়ে আবার সুরের খেয়াল! পেটের ভাত আগে শেখ!”

কিন্তু তার মা বলতেন, “সুরকে ভালোবাসা কোনো অপরাধ না, মা। হয়তো একদিন এই সুরই তোমার পথ খুলে দেবে।”









২. সময় বদলায় না, মানুষ বদলায়
পড়াশোনার পাশাপাশি সে বিভিন্ন ছোটখাটো অনুষ্ঠানে গান গাইত। কণ্ঠে ছিল মায়া, সুরে ছিল মুগ্ধতা। একবার শহরের এক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সে দ্বিতীয় স্থান পেল। প্রথম হয়েছিল শহরের নামকরা এক সংগীত শিক্ষকের ছেলে, আদিব।

আদিব অহংকারী ছিল। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সে ঠাট্টা করে বলল,
“এই মেয়েটা পুরনো পিয়ানো নিয়ে কিছু করতে আসছে নাকি?”

সাদিয়ার চোখে জল চলে এল, কিন্তু সে কিছু বলল না। শুধু মনে মনে বলল — "একদিন এই অপমানই হবে আমার জয়ের আগুন।"

৩. সংগ্রামের বছরগুলো
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সাদিয়া টিউশন করতে শুরু করল। অনেক রাত পর্যন্ত সে গান শেখাত, কণ্ঠ ঠিক রাখার জন্য ঠান্ডা পানিও খেত না। ইউটিউবে নিজের গান আপলোড করত, কিন্তু দর্শক ছিল হাতে গোনা।

হঠাৎ একদিন তার করা একটি পুরোনো বাংলা গান কাভার ভাইরাল হয়ে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই শহরের একটি নামকরা সংগীত কোম্পানি তার সঙ্গে চুক্তি করল। তার কণ্ঠে ছিল গভীরতা, যেটা বহুদিন শ্রোতারা পায়নি।

৪. ফিরে আসা... এক অন্য সুরে
পাঁচ বছর পর সাদিয়া দেশের বিখ্যাত গায়িকা। শহরের এক কনসার্টে পারফর্ম করতে এলো। মঞ্চে উঠে সে বলল:

“এই মঞ্চে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম ধুলো ধরা একটি পিয়ানোতে সুর খুঁজতে খুঁজতে। আমি আজ এখানে, কারণ আমি হার মানিনি। আর আজ একটা মানুষকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই — তিনি আমাকে নিচু করেছিল, কিন্তু সেই নিচু করাটাই আমাকে দাঁড়াতে শিখিয়েছিল।”

সবার কৌতূহল — সে কার কথা বলছে?

সাদিয়া বলল,
“আদিব... তুমি যেদিন বলেছিলে ‘এই মেয়েটা কিছু করতে আসছে নাকি’, আমি সেদিন কেঁদেছিলাম। কিন্তু আজ আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতে চাই — কারণ সেই অপমানই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।”

মাঠে নীরবতা। সামনের সারিতে বসা আদিব চোখ নামিয়ে বসে ছিল। এরপর সাদিয়া বলল,
“তবে তুমি ভুল ছিলে না আদিব, আমি আসলেই কিছু করতে এসেছিলাম — মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে।”

৫. সেই পুরনো পিয়ানো
সাদিয়া যখন তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করল, সেই কাভারে ছিল তার ছোট ঘরের কোণার পুরনো পিয়ানোটা। ক্যাপশনে সে লিখেছিল —
“যার কোনও শব্দ নেই, সেইও হয়ে উঠতে পারে একদিন সবচেয়ে গম্ভীর সুরের জন্মদাতা।”


শেষ কথা:

জীবন অনেক সময় কঠিন হয়, অপমানের কাঁটা বিছানো থাকে। কিন্তু সেই কাঁটাগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে জয়ের সিঁড়ি। সেই পথ হাঁটতে জানলেই, যে কেউ হয়ে উঠতে পারে একজন ‘আলোর শিল্পী’।







No comments:

Post a Comment

🌿 চুল পড়া বন্ধ করুন প্রাকৃতিক হেয়ার অয়েলে

🌿 ঘরে বসেই তৈরি করুন হারবাল হেয়ার অয়েল – ঝলমলে চুলের সহজ উপায়।