Tuesday, June 3, 2025

তোমার অপেক্ষায় 🍁

 

গল্প ভান্ডার /:





তোমার অপেক্ষায় 🍁




তোমার অপেক্ষায়

একটি হৃদয় ছোঁয়া প্রেম কাহিনি

ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে প্রতিদিন লাখো মানুষ চলে, আসে আর হারিয়ে যায়। কিন্তু সেই দিনটি ছিল একটু আলাদা। বনানীর এক ছোট্ট ক্যাফেতে বন্ধু সাদিয়ার জন্মদিনের আড্ডায় প্রথম দেখা রিমি আর আদিলের। আদিল গম্ভীর প্রকৃতির, চোখে চশমা, একটু কম কথা বলে — সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। রিমি পুরোপুরি বিপরীত — প্রাণবন্ত, রঙে ভরা মুখ, তার চোখ দুটো যেন সবসময় কিছু আঁকছে।

প্রথম দেখা, প্রথম আলাপ — সাধারণ কিছু কথাবার্তা। কিন্তু আদিল লক্ষ করেছিল, রিমির হাতে ছোট্ট একটা স্কেচবুক, পাতায় পাতায় আঁকা মানুষের মুখ, গাছ, আকাশ… এবং নিজে। সে জিজ্ঞেস করেছিল,
— “তুমি এই ছবিগুলো সব নিজে এঁকেছো?”
রিমি হেসে বলেছিল,
— “হ্যাঁ। এটাই আমার ভাষা। আমি অনুভূতির ভাষা আঁকি।”

তারপর থেকে শুরু। ধীরে ধীরে তাদের দেখা হওয়া, কথা হওয়া। একটা ছুটির বিকেলে আদিল প্রথম রিমির স্টুডিওতে গিয়েছিল। দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলোর মাঝে সে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিল — একরকম চুপচাপ ভালোবাসা।

রিমি আর আদিলের বন্ধুত্ব পরিণত হয়েছিল এক নীরব প্রেমে। কেউ কিছু বলেনি, কিন্তু উভয়ের চোখে স্পষ্ট ছিল ভালোবাসা।
একদিন আদিল বলেছিল,
— “তুমি জানো, আমি কখনো কিছুতে খুব বেশি সময় দিই না। তবে তোমার পাশে এলে মনে হয়, সময়টা থেমে যায়।”
রিমি একটু হেসে বলেছিল,
— “আমার তো ক্যানভাসে সময় ধরা থাকে। তোমাকে আঁকলে হয়তো ধরে ফেলতে পারি।”

এই রকমই চলছিল তাদের। হঠাৎ একদিন রিমির ফোনে এসেছিল এক খবর — আদিলকে তিন বছরের জন্য জার্মানির হ্যামবুর্গে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। সেদিন বিকেলে তারা গিয়েছিল ধানমন্ডি লেকের পাশে বসে থাকা ছোট্ট চা-দোকানটায়। দুজনেই চুপচাপ।

শেষমেশ রিমি বলল,
— “তুমি তো চলে যাচ্ছো। ফিরে আসবে তো?”
আদিল গভীরভাবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
— “তুমি অপেক্ষা করবে?”
— “প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে,” — রিমির উত্তর।

বিদেশ যাত্রার আগের রাতে আদিল তাকে একটা খাম দিয়ে গেল — ভিতরে একটা চিঠি:

“তুমি যেখানে আছো, আমার ঘর ওখানেই। আমি যদি হারিয়ে যাই, তুমি ক্যানভাসে আমাকে খুঁজে নিও। ভালো থেকো। অপেক্ষা করো। ফিরে আসবো। তোমার আদিল।”

🍁






তিন বছর পর...

রিমি প্রতিদিন একটার পর একটা স্কেচ করত — প্রতিদিনই একটা করে নতুন ছবি। কখনও আদিলের মুখ, কখনও তাদের লেকের আড্ডা, কখনও সেই পুরনো ক্যাফে। এক একটা ছবি যেন তার অনুভবের দিনপঞ্জি।

প্রতিবছর একবার করে সে নিজের আঁকা ছবি নিয়ে ছোট্ট একটা এক্সিবিশন করত — শিরোনাম থাকত,
“অপেক্ষার রঙ”

তৃতীয় বছর শেষের দিকে একদিন, এমনই এক এক্সিবিশন চলাকালে এক আগন্তুক ক্যাফের কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। রিমি ব্যস্ত ছিল দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে। হঠাৎ পরিচিত এক কণ্ঠ —
— “এই ছবিটার নাম ‘তোমার অপেক্ষায়’ হলে কেমন হয়?”

রিমি ঘুরে দাঁড়াল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিঃশব্দ চারপাশ। তার সামনে দাঁড়িয়ে আদিল — একটু লম্বা দাড়ি, চোখে ক্লান্তি, কিন্তু সেই একই মুগ্ধ হাসি।

রিমির চোখে জল। সে বলল,
— “তুমি তো বলেছিলে, ফিরে আসবে।”
আদিল ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বলল,
— “ভালোবাসা কখনও প্রতিশ্রুতি ভোলে না।”
— “তুমি এত দেরি করলে কেন?”
— “আমি চাইছিলাম, তোমার আঁকা শেষ হোক — যেন তুমি আমার না-থাকার দিনগুলোও রঙে ভরিয়ে ফেলো।”

সেই এক্সিবিশনের সবচেয়ে বড় ছবিটার নিচে লেখা হল,

“তোমার অপেক্ষায় — যখন প্রেম শুধু ফিরে আসে না, বরং চিরদিনের গল্প হয়ে যায়।”

🍁 



 

No comments:

Post a Comment

🌿 চুল পড়া বন্ধ করুন প্রাকৃতিক হেয়ার অয়েলে

🌿 ঘরে বসেই তৈরি করুন হারবাল হেয়ার অয়েল – ঝলমলে চুলের সহজ উপায়।