গল্পের জগত 🍂
তোমার চোখে বসন্ত
তোমার চোখে বসন্ত
অধ্যায় ১: এক বিকেলের দেখা
ঢাকার ধানমন্ডি ৯ নম্বর রোড। চারপাশে কোলাহল, গাড়ির হর্ন, আর চায়ের দোকান থেকে ভেসে আসা হাসির শব্দে মুখর এক সাধারণ বিকেল। অফিস ছুটির ঠিক পরেই বাস ধরার আগে প্রতিদিনই শিহাব হেঁটে যায় একটা পুরনো রাস্তা ধরে। পুরনো বাড়িগুলোর গায়ে যেন স্মৃতির ধুলা জমে আছে।
তিনতলা একটা হলুদ বাড়ির দিকে চোখ আটকে যায় আজ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক মেয়ে—নীলা। তার পরনে সাদা আর আকাশি রঙের শাড়ি। চুলগুলো খোলা, আর এক হাতে ধরা একটা বই। চোখ দুটো যেন গভীর জলের মতো, তাতে কি এক অদ্ভুত বিষণ্নতা লুকিয়ে আছে।
শিহাব থমকে দাঁড়ায়। কোনো কারণ ছাড়াই। মেয়েটা তাকিয়ে ছিল দূরে, হয়তো আকাশে।
আর সেই এক ঝলকেই শিহাবের পৃথিবী বদলে গেল।
অধ্যায় ২: প্রতিদিনের অপেক্ষা
পরের দিন আবার সেই রাস্তায় আসে শিহাব। অজান্তেই পা চলে আসে ওই বাড়িটার সামনে। আজ নীলা নেই। শুধু বারান্দায় ফেলে রাখা একজোড়া শুকোতে দেওয়া ওড়না। তবু শিহাব দাঁড়ায়, একটুখানি।
এরপর থেকে প্রতিদিন কাজ শেষে ওই বাড়ির সামনে দাঁড়ায় সে। কখনো চোখে পড়ে নীলাকে, কখনো পড়ে না। কিন্তু সময়ের সাথে একটা নেশা তৈরি হয়ে যায়। যেন দিনের ক্লান্তি ভুলে যায় কিছু সময়ের জন্য।
একদিন দেখে নীলা ছাদে হাঁটছে। পরনে হলুদ কামিজ, কানে হেডফোন। তার হাসিটা যেন রোদ্দুরে মিশে আছে। শিহাবের বুকের ভিতরটা কেমন ধকধক করে ওঠে।
অধ্যায় ৩: প্রথম কথোপকথন
এক শনিবার, সাহস করে শিহাব বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল টেপে। বুকে ধুকপুক শব্দ। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে যায়।
নীলা দাঁড়িয়ে। চোখে বিস্ময়।
— "জ্বি? আপনি?"
— "আমি… মানে… আমি এখানে প্রায়ই যাই, হেঁটে… সেই জন্য…"
— "আপনি কি কিছু বিক্রি করতে চান?"
— "না না! আমি শিহাব। আপনি কি কবিতা পড়েন?"
নীলা একটু হেসে বলে,
— "পড়ি। তবে অপরিচিত লোকের হাতে বই দেই না।"
তবুও তার কণ্ঠে কোনো বিরক্তি ছিল না। বরং শিহাবের উদ্ভট প্রশ্ন শুনে যেন মজা পেয়েছে।
সেদিনই শুরু এক নীরব বন্ধুত্বের। শিহাব মাঝে মাঝে এক-দু'টো বই রেখে যায় বাড়ির দড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া ব্যাগে। নীলা তা পড়ে, মাঝে মাঝে ছাদ থেকে নিচে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে চলে যায়।
🍂
অধ্যায় ৪: ছায়ার নিচে ভেজা
বর্ষার এক বিকেল। হঠাৎ মেঘ করে আসে। শিহাব বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে, হাতে বই। আর ঠিক সেই সময়েই বৃষ্টি নামে। মেঘের গর্জন, বাতাসের ছোঁয়ায় শিহাব দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকে।
হঠাৎ ছাদ থেকে একটা ছাতা ছুঁড়ে পড়ে।
নীলা দাঁড়িয়ে, চুল ভিজে গিয়েছে হালকা, চোখে শ্বাসরুদ্ধ উত্তেজনা।
— "ভিজবেন না! আপনি তো কবিতা নিয়ে কথা বলেন, ঠান্ডা লাগবে না?"
শিহাব ছাতা হাতে নেয়, হেসে বলে,
— "তোমার ছায়ায় ভিজলে তো ঠান্ডা লাগবে না।"
নীলা একটু লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।
কোনো কথা না বলে, সেদিনকার বৃষ্টিটা ভিজে থাকে তাদের দুজনের মনের ভেতর।
চলবে…
চাইলে আমি পরবর্তী অধ্যায়গুলোও লিখে দিতে পারি, যেখানে ওদের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হবে, আসবে ভুল বোঝাবুঝি, দূরত্ব, আবার এক নতুন ভোরের শুরু।
তুমি কি চাও আমি পরের অধ্যায় লিখি?
অবশ্যই, চল "তোমার চোখে বসন্ত" গল্পের পরবর্তী অধ্যায় শুরু করি।
তোমার চোখে বসন্ত
অধ্যায় ৫: সুরের সেই সন্ধ্যা
বৃষ্টির ছাতার ঘটনার পর থেকে শিহাব আর নীলার বন্ধুত্ব একটু একটু করে রঙ পেতে থাকে। প্রতিদিন দেখা না হলেও, মাঝে মাঝে নীলা ছাদে উঠে শিহাবের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। শিহাব বই রেখে যায়, সঙ্গে থাকে নিজের লেখা কবিতার ছোট ছোট চিরকুট।
এক সন্ধ্যায়, নীলা একটা চিরকুটে লিখে ফেলে,
"তুমি কি শুধু কবিতা পড়ো, না গানও শোনো?"
শিহাবের মুখে হাসি ফোটে। উত্তর দেয়:
"গান শুনি, তবে শুধু তখন, যখন মনে হয় কেউ একজন শুনছে আমার সঙ্গে।"
সেদিনের রাতে নীলা তার জানালায় বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত ছেড়ে দেয় খুব নিচু ভলিউমে—“আমার পরাণ যাহা চায়, তুমি তাই…”
শিহাব রাস্তা দিয়ে হাঁটে, থেমে যায় সেই বাড়ির নিচে। তার মনে হয়, এ যেন ঠিক প্রেম নয়, আবার প্রেম ছাড়া অন্য কিছু নয়।
অধ্যায় ৬: ভালোবাসা বলার সাহস
নভেম্বরের শেষ দিক। বাতাসে শীতের পরশ। শিহাব বুঝে গেছে, সে নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি।
একদিন সে সাহস করে বলে,
— "নীলা, তোমার চোখের দিকে তাকালেই আমার মনে হয় বসন্ত এসে গেছে।"
নীলা কিছু বলে না। কেবল একটু হেসে বলে,
— "সব ঋতুরই শেষ আছে, বসন্তেরও। তখন কি হবে?"
শিহাব একটু থেমে উত্তর দেয়,
— "যতবারই বসন্ত যাবে, আমি নতুন করে তোমায় ভালোবেসে নেব।"
সেদিনের কথা আর বাড়ে না। কিন্তু শিহাব বুঝে যায়, নীলা ভয় পায়—ভয় পায় ভালোবাসা হারানোর।
অধ্যায় ৭: দূরত্ব
এরপর কিছুদিন নীলা আর বারান্দায় আসে না, ছাদে ওঠে না। চিরকুটও আসে না।
শিহাব প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে বাড়ির সামনে, কিন্তু কোনো সাড়া নেই।
একদিন বাড়ির কাজের মেয়েকে জিজ্ঞেস করে—
— "নীলা ম্যাডাম আছেন?"
মেয়েটি বলে,
— "উনি এক আত্মীয়ের বাড়ি গেছেন। শরীরটা ভালো নেই।"
শিহাব ব্যথা পায়। ভাবতে পারে না, কী এমন হলো হঠাৎ করে। কষ্ট পায়, বিরহে পোড়ে।
অধ্যায় ৮: ফিরে আসা
দু’সপ্তাহ পর, এক শীতের সকালে, শিহাব হঠাৎ বারান্দায় দেখতে পায় নীলাকে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে, হাতে গরম চায়ের কাপ। চোখে ক্লান্তি, কিন্তু তাকাতেই হালকা একটা হাসি।
সেদিন বিকেলে, নীলা নিচে নেমে আসে।
— "আমি ভয় পেয়েছিলাম, শিহাব।"
— "ভালোবাসলে ভয় পেতে হয় না, বিশ্বাস রাখতে হয়," শিহাব বলে।
নীলা চোখ সরিয়ে নেয়। তারপর বলে,
— "তুমি যদি এখনো চাও… তাহলে বসন্তটা শুরু হোক আবার…"
শিহাব হাত বাড়ায়। নীলা হাত ধরে।
চলবে…
পরের অধ্যায়ে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হবে, পরিবার ও সমাজের বাধা আসবে কিনা, নীলার জীবনে লুকানো কোনো অতীত আছে কিনা—সব কিছু ধীরে ধীরে উন্মোচিত হবে।
তুমি কি পরের অধ্যায় চাইছো? আমি আগের মতোই উপন্যাসের ধারায় পরবর্তী অধ্যায় লিখে দেব।
অবশ্যই! এবার আমি উপন্যাসধর্মী ধারায় "তোমার চোখে বসন্ত" গল্পটির বাকি অধ্যায়গুলো শেষ করে এক পূর্ণাঙ্গ রোমান্টিক গল্পে রূপ দিচ্ছি। গল্পের পরিণতি হবে আবেগঘন, বাস্তব ও হৃদয়ছোঁয়া—যেমন তুমি পছন্দ করো।
🍂
তোমার চোখে বসন্ত
একটি পূর্ণাঙ্গ প্রেমের উপন্যাস
অধ্যায় ৯: পেছনের অন্ধকার
নীলা আর শিহাবের সম্পর্ক একটু একটু করে গভীর হতে থাকে। তারা নিয়মিত দেখা করে, কথা বলে। মাঝে মাঝে শিহাব নীলাকে নিয়ে যায় বইমেলায়, কখনো বা তার প্রিয় পুরাতন ক্যাফেতে। নীলা আস্তে আস্তে তার মন খুলে দেয়, কিন্তু তবু কিছু একটা আছে, যা সে বলতে ভয় পায়।
এক সন্ধ্যায়, ধানমন্ডির লেকের পাশে বসে শিহাব জিজ্ঞেস করে,
— "তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো, নীলা?"
নীলা চোখ সরিয়ে নেয়। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
— "তোমার জানা উচিত। আমার একটা বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। বিয়েটা হয়নি, কিন্তু তার ছায়া এখনও আমাকে তাড়া করে।"
শিহাব শুধু বলে,
— "তুমি যেটা হয়ে উঠেছ, আমি সেটা ভালোবেসেছি, তোমার অতীতকে নয়, ভবিষ্যতকে ভালোবাসতে চাই।"
নীলা প্রথমবার শিহাবের হাত শক্ত করে ধরে। ওর চোখে জল আসে।
অধ্যায় ১০: পরিবারের ছায়া
শিহাব নীলাকে নিয়ে নিজের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করায়। মা একটু চিন্তিত, কারণ নীলা সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তার কোনো চাকরি নেই, লেখাপড়া শেষ করে বাসায় বসে। কিন্তু শিহাব স্পষ্ট জানায়,
— "আমি প্রেমে পড়েছি একজন মানুষের, তার চাকরি বা ডিগ্রির নয়।"
নীলার পরিবারও শুরুতে দ্বিধায় ছিল, কারণ শিহাব ব্যস্ত একজন কর্পোরেট অফিসার। ভাবছিল, এমন ছেলে কি আদৌ ওদের মত পরিবারে মানাবে?
কিন্তু সময়ের সাথে, দুই পরিবারই বুঝে নেয়—ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তাহলে সমাজ, শ্রেণি কিংবা পূর্ব ইতিহাস কিছুই বাধা হতে পারে না।
অধ্যায় ১১: বিচ্ছেদের সন্ধ্যা
তবে জীবন এত সহজ নয়। শিহাবের কর্মজীবনে হঠাৎ বড় এক পরিবর্তন আসে। সে একটা নতুন প্রজেক্টের জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হবে এক বছরের জন্য।
নীলা চুপচাপ শুনে বলে,
— "তুমি যাও। আমি অপেক্ষা করতে পারি, যদি জানি তুমি ফিরে আসবে।"
শিহাব অবাক হয়। বলে,
— "তুমি চাও না আমরা এর মধ্যে বিয়ে করে নিই?"
নীলা মাথা নাড়ে,
— "ভালোবাসা পরীক্ষা নিতে হয় না, শিহাব। সময়ই আমাদের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ হবে।"
বিদায়ের দিনে শিহাবের চোখে জল। প্লেন ছাড়ার আগে সে মেসেজ পাঠায়,
"তুমি আমার বসন্ত। আমি ফিরে আসব, শুধু তোমার জন্য।"
🍂
অধ্যায় ১২: ফিরে আসা
এক বছর পর, মার্চের এক সকালে, শিহাব ফিরে আসে। ঢাকার সেই পুরনো রাস্তা, সেই তিনতলা হলুদ বাড়ি, সেই বারান্দা—সবকিছু ঠিক আছে। শুধু একটাই ভয় তার মনে—নীলা কি এখনও আছে?
সে গিয়ে দাঁড়ায় সেই বাড়ির নিচে। বারান্দায় কিছুক্ষণ পর একজোড়া চোখ দেখা দেয়—চোখে সেই চেনা হাসি।
নীলা নীচে নেমে আসে ধীরে ধীরে। পরনে শাড়ি, চোখে আলো।
— "তুমি ফিরেছ।"
— "তুমি তো বলেছিলে, বসন্তে ফিরবে। এখন তো বসন্ত।"
শিহাব ব্যাগ থেকে একটা ছোট বাক্স বের করে। একটা আংটি।
— "তুমি আমার জীবনের ঋতু হয়ে যাবে?"
নীলা চুপচাপ হাত বাড়ায়।
শেষ অধ্যায়: বসন্ত সারাবছর
বিয়ের পর তারা ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করে। সন্ধ্যাবেলা নীলা ছাদে উঠে বই পড়ে, শিহাব অফিস থেকে ফিরে ছাদে দাঁড়িয়ে ওকে দেখে। মাঝে মাঝে তারা দুইজনে রবীন্দ্রসংগীত ছাড়ে, মাঝেমধ্যে ছোট্ট কোনো চিঠি রেখে দেয় একে অন্যের জন্য।
তাদের ভালোবাসা কোনো রোমাঞ্চকর নাটক ছিল না, বরং ছিল প্রতিদিনের ছুঁয়ে যাওয়া মুহূর্ত, অনুচ্চারিত ভালোবাসা, আর একসাথে সময় কাটানোর শান্তি।
কারণ তারা দুজনেই জানতো—প্রেম মানে শুধু হাত ধরা নয়, বরং একসাথে এক বসন্ত থেকে আরেক বসন্তে হেঁটে যাওয়া।
সমাপ্ত ;
🍂
No comments:
Post a Comment