📖 বরফ গলা ভালোবাসা অধ্যায় ২:

📖 বরফ গলা ভালোবাসা

---

📖 বরফ গলা ভালোবাসা 

✨ অধ্যায় ২: অপেক্ষার দিনগুলো

রায়হানের চলে যাওয়ার পর গ্রামের আকাশে যেন কুয়াশা নেমে আসে।
ইশরাত প্রতিদিন স্কুলে আসে, প্রতিদিন ক্লাস নেয়, প্রতিদিন হাসে… কিন্তু সেই হাসির মধ্যে কোনো আলোর ঝিলিক থাকে না। যেন সে হাসে দায়িত্ববোধে, ভালোবাসায় নয়।

রায়হান চিঠিতে লিখেছিল, "যেদিন তুমি বলবে, ‘থাকো’, আমি আর এক পা-ও সরবো না।"
কিন্তু ইশরাত তো কিছু বলেনি… সে চুপ করে ছিল।

🕰️ সময় চলে যায়...

একটি, দুটি করে চলে যায় মাস। শীত নামে বিলপাড়ায়।
খেজুর গাছের রস ঝরতে থাকে, শিশির জমে মাঠে, আর স্কুলে আসে নরম কম্বল মুড়ি দেওয়া ছোট ছোট বাচ্চারা।

কিন্তু স্কুলের পেছনের জামগাছটা একলা দাঁড়িয়ে থাকে।
যেখানে একদিন রায়হান বলেছিল, “এই গাছটার ছায়ায় বসে তোমার জন্যই অপেক্ষা করবো,”
আজ সেখানে শুধু ছায়া আর বাতাস।

ইশরাত সন্ধ্যায় অনেক সময় স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। দূরে তাকিয়ে, দৃষ্টি হারিয়ে, যেন কিছু একটা খুঁজে—যা নেই, কিন্তু থেকে গেছে অনুভবে।

  একটি চিঠি আসে

তিন মাস পরে ডাকপিয়ন নিয়ে আসে একটি চিঠি—রায়হানের চিঠি।

*“ইশরাত,
কাজটা অনেক বড়ো। আমি প্রতিদিন পৃথিবীর অন্য প্রান্তে নতুন কিছু শিখছি, কিন্তু রাতে ঘুমাতে গেলে চোখ বন্ধ করলেই দেখি তোমার চোখ।
তোমার চোখে আমি কুড়িগ্রাম দেখি, জামগাছ দেখি, স্কুল দেখি—সব দেখি, শুধু নিজেকে দেখি না।

তুমি জানো, আমি যেতে চাইনি। কিন্তু তুমি কিছু বলোনি… তাই আমি গিয়েছি।

আমি জানি, তুমি অপেক্ষা করছো। কিন্তু জানতে চাই—তুমি কি শুধু স্কুলের জন্য অপেক্ষা করো, নাকি আমার জন্যও?”*

ইশরাত চিঠির পাতায় আঙুল বুলিয়ে বলে ওঠে,
— “তুমি তো জানতে, আমি বলা মানুষ নই। আমি শুধু থাকার মধ্যে অনুভব রেখে দিই।”

🌾 একটি বিশেষ দিন

চৈত্র মাস। গরম পড়েছে। গ্রামের মাঠে এখন ধান পাকার গন্ধ।
সেইদিন ছিল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ইশরাত সেজেছিল একটুখানি বেশী করে—নীল ছাতা, সাদা সালোয়ার, কপালে ছোট্ট একটা টিপ।

কিন্তু সে জানত না, সেই দিনটাই হবে বরফ গলার দিন।

ঠিক দুপুরে, যখন পুরস্কার বিতরণী শুরু হচ্ছে, হঠাৎ মাইক্রোফোনে ভেসে ওঠে পরিচিত এক কণ্ঠ—
— “এই পুরস্কারটা আমি দেবো। কারণ আমি ফিরে এসেছি। আর এবার কেউ না বললে আর যাবো না।”

লোকজন অবাক, শিক্ষকেরা চমকে ওঠে।
ইশরাত ধীরে ধীরে ঘুরে তাকায়…
রায়হান।

সাদা পাঞ্জাবি, গলায় সেই পুরনো ঝোলানো ব্যাগটা, চোখে ক্লান্তি… কিন্তু ঠোঁটে সেই চেনা হাসি।

🎇 একটি ঘোষণা

মঞ্চে উঠে রায়হান বলে,
— “এই গ্রাম ছেড়ে আমি কিছু শিখেছি—ভালোবাসা গলার মতো নয়, বোঝার মতো।
আমি বুঝেছি, ইশরাত কিছু বলেনি, কারণ সে আমায় ঠেকাতে চায়নি। সে চায় আমি নিজে বুঝি।”

তারপর সে ইশরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
— “আজ আমি তোমার সামনে আছি। যদি এখনো চাও—আমি এখানেই থেকে যাবো, স্কুল গড়বো, ঘর বানাবো… হয়তো একদিন তোমার সঙ্গে সংসারও।”

সবার সামনে, ইশরাত প্রথমবার তার দিকে তাকিয়ে বলে,
— “থাকো।”

শুধু একটি শব্দ।
কিন্তু সেই এক শব্দেই গলে যায় বছরের বরফ।
আকাশে ওঠে কুড়িগ্রামের রোদ, মাঠে নামে ফুল, আর একটা প্রেমের গল্প পরিণতির পথে পা রাখে।

---

পরবর্তী অধ্যায়:

অধ্যায় ৩: নতুন একটা সকাল