গল্পের জগত ;

লেখক: নীল রোজ 🥀

📖 **বরফ গলা ভালোবাসা**

## 📖 **বরফ গলা ভালোবাসা**

### ✍️ উপন্যাস: অধ্যায় ১ — ফিরে আসা

কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এক গ্রাম, নাম **বিলপাড়া**। গা-ছমছমে নীরবতা আর সরষেখেতের হলুদ ছায়া মাখা এক চিরচেনা বাংলা গ্রাম। পাখির ডাক, গরুর গাড়ির চাকা, আর মাঠে কাজ করা কৃষকের হাঁকডাকেই এ গ্রামের সকাল শুরু হয়।

এই গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করেন **ইশরাত**। বয়স সাতাশ, গম্ভীর মেয়ে, মুখে কথা কম, কিন্তু চোখে গভীরতা। মানুষজন বলে, সে যেন শীতের সকালে কুয়াশার মতো—চোখে পড়ে, ছুঁতে গেলে হারিয়ে যায়।

ইশরাতের জীবনটা ছিল একরকম সাজানো। স্কুল, বাড়ি, বই আর নিজের ছোট্ট বাগান। তার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, মা অনেক আগেই মারা গেছেন। জীবনের ভার একাই বহন করে সে, কিন্তু মুখ ফুটে কারও কাছে কিছু চায় না।

🥀

📅 **একটি নতুন দিন**

একদিন সকালে হঠাৎ করেই গ্রামে ফিরে আসে **রায়হান**। বছর ছয়েক আগে এই গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছিলো পড়াশোনার জন্য। তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বড় এক কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিল। সবার ধারণা ছিল, শহরেই থেকে যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে গ্রামের জমিজমা আর বাবার স্বপ্নকে বাঁচাতে ফিরে এলো সে।

রায়হান বদলে গেছে। তার মুখে গোঁফ, চোখে আত্মবিশ্বাস, আর হাতে কিছু স্বপ্ন—যা সে গ্রামে বাস্তবায়ন করতে চায়। স্কুলের পুরনো ভবনটি সংস্কারের জন্য প্রকল্প হাতে নেয় সে। চেয়ারম্যান সাহেব তাকে কাজে লাগিয়ে দিলেন স্কুল নির্মাণ প্রকল্পে।

সেই স্কুলেই প্রথম দেখা ইশরাত ও রায়হানের।

ততদিনে স্কুলের দেয়ালে শেওলা জমেছে, চালার টিন গলে গেছে, আর ক্লাসঘরে ছেলেমেয়েরা গাদাগাদি করে বসে। ইশরাত তখন মধ্যরেখায় দাঁড়িয়ে।

রায়হান প্রথম দেখা মুহূর্তে মুগ্ধ হয়ে যায়।

সে বললো,

— “এই স্কুলটা তো আমার শৈশবের প্রেম। আজ দেখছি, আমার বড়ো হয়ে আসল প্রেমটা এখানেই দাঁড়িয়ে আছে।”

ইশরাত ভ্রু কুঁচকে বলেছিল,

— “আপনার শহুরে কথাবার্তা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের শেখাবেন না যেন।”

— “তাদের শেখানোর আগেই আপনাকে শেখাবো,” হাসি দিয়ে উত্তর দেয় রায়হান।

📚 **একটি বন্ধুত্বের শুরু**

পরের কিছুদিন ইশরাত লক্ষ্য করে, রায়হান প্রতিদিন সকালবেলা আসে। অজুহাত স্কুল নির্মাণের, কিন্তু আসল উদ্দেশ্য যেন অন্য কিছু। সে নিজেই কাঠের কাজ, টিনের হিসাব, রঙের স্যাম্পল সব নিজ হাতে দেখে। সময় করে ক্লাসের ছেলেমেয়েদের জন্য চকলেট আনে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চা খাওয়ায়।

একদিন স্কুলের পিছনের জামগাছের নিচে বসে ইশরাত বলে,

— “আপনি সবকিছু এত গুরুত্ব দিয়ে করেন কেন?”

রায়হান উত্তর দেয়,

— “কারণ এখন আমি বুঝি—গ্রামের মাটি, গ্রামের স্কুল আর গ্রামের মানুষই আসলে সবচেয়ে আপন।”

সেই মুহূর্তে ইশরাতের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। তার চোখে আজ একটু উষ্ণতা, যেন বরফ গলার ইঙ্গিত।

🥀

🕊️ **অপ্রকাশিত ভালোবাসা**

তাদের বন্ধুত্ব বাড়ে, কিন্তু কেউ কিছু বলে না। রায়হান জানে, ইশরাত শহরের লোকদের বিশ্বাস করে না। সে চায় না যেন তার উপস্থিতি কোনো ভুল ধারণা তৈরি করে।

এক সন্ধ্যায়, যখন ধানের গন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে, রায়হান বলে বসে—

— “ইশরাত, যদি আমি একদিন বলি, আমি এই গ্রামেই থাকতে চাই, তোমার পাশে, তাহলে কি তুমি আমার পাশে থাকবে?”

ইশরাত উত্তর দেয় না। শুধু বলে,

— “বরফ গলতে সময় লাগে, কিন্তু একবার গলে গেলে তা আর ঠাণ্ডা থাকে না।”

🌧️ **একটি টানাপোড়েন**

তাদের সম্পর্ক তখন ভাঙা না জোড়া, মাঝামাঝি কোথাও। এর মধ্যেই শহর থেকে আসে এক চাকরির অফার—বিশ্বব্যাপী প্রকল্পে রায়হানকে নিয়োগ করতে চায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাই চায় সে যেন ফিরে যায় শহরে।

গ্রামে সাড়া পড়ে যায়—“রায়হান চলে যাচ্ছে।”

ইশরাত কিছু বলে না, কিন্তু তার চোখের ভাষা বলে—সব বোঝে।

তবে যাওয়ার আগের রাতে, রায়হান স্কুলের জানালার ফাঁক দিয়ে রেখে যায় একটি চিঠি—

> **“আমি বরফ গলাতে চাইনি, আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজে গলাও।

> যদি সত্যিই তুমি আমার অপেক্ষায় থাকবে, আমি আবার ফিরে আসবো।

> যেদিন তুমি বলবে, ‘থাকো’, আমি আর এক পা-ও সরবো না।”**

এই ছিল **অধ্যায় ১: ফিরে আসা**।

চলবে ❤️📖

🥀