📖
বিছানায় বসে নিজের এইমাত্র বিয়ে হওয়া বর কে দেখছি আর কাঁদছি |
হয়তো কান্না করাই আমার নিয়তি। হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমার জীবনের খাতায় শুধু দুঃখ লিখেছেন। নয়তো কেন আমার সাথেই এমন হয় ? এমন এক জীবন পেয়েছি, না পারছি ম*রতে না পারছি বাঁচতে। আসলে আমাদের মতো মেয়েদের বাঁচার অধিকার নেই । আমরা সমাজের জন্য একটি পা*প । আমাদের কি আসলেই বিয়ে হয় । ভাবনা অসীম কিন্তু উত্তর নেই।
📖
ভাবনার মাঝেই একটি বয়স্ক লোক ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো। তার বয়স আনুমানিক ৬০ তো হবেই । হাতে একটি ভয়ঙ্কর অ*স্ত্র। সমাজের মানুষ এই ভয়ঙ্কর জিনিস টিকে রিভ*লবার বলে ।
এসব দেখে একাধারে কান্না করা মেয়েটির মনে আরো ভয় উদয় হলো । কিন্তু তার পাশে বসে থাকা পুরুষটির চোখে ভয় এর ছিটে ফোঁটাও দেখা গেলো না । সে এক গভীর চিন্তায় মগ্ন ।
বৃদ্ধ লোকটা এসেই বললো :
……তোমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে হে । মোহরানা ধার্য করা হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা । এবার দেখি তোমরা নিজেদের এই বিয়ে থেকে কিভাবে বাঁচাও । অসভ্যতা যখন করেছো, তাহলে এই মেয়ের সাথেই সংসার করো । তোমাদের মতো নৌংরা ছেলে পুলের জন্য সমাজটা আজকে রসাতলে ঠেকেছে ।
লোকটির কথায় স্পষ্ট ধিক্কার ও লাঞ্ছনা। কান্নারত মেয়েটি আর নিতে পারলো না এসব । সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো
এবং বললো:
……বিশ্বাস করুন দাদু আমি এই লোকটিকে চিনি না পর্যন্ত । এনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনারা ভুল ভাবছেন। প্লিজ আমাকে যেতে দিন
📖
বৃদ্ধ লোকটি কথাটা উপহাস হিসেবে গ্রহণ করলেন :
………তোমরা নিজেকে কি মনে করো হে ছুকরি , আমাদের দাঁড়ি রোদে পাকছে । তোদের মতো মেয়ে ছেলেদের তো জ্বালিয়ে শেষ করে দেওয়া উচিৎ । নোংরামি করার সময় এতো কান্না কোই ছিলো ? কতো দেখছি তোমাদের মতো, ধরা পরলেই কান্না শুরু করে দেয়।
তারপর বৃদ্ধটি , একটি লোকের ডাকে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আর এইদিকে অসহায় হয়ে পড়ে গেল মেয়েটি । এখন সে কি করবে ? কি ভাবে উদ্ধার পাবে এই স্থান থেকে? কার কাছে সাহায্য চাইবে ? কিন্তু তাকে আদৌও কেউ সাহায্য করবে তো ! এটা যেন চরম উপহাস ঠেকালো তার কাছে ।
হঠাৎ মেয়েটির চোখ আটকালো সামনের পুরুষটির দিকে । লম্বা কালো দারি ,ও মোছ এ ভর্তি তার মুখ গহবর। এক হাতে কাপড়ের একটি ব্যান্ডেজ। সম্ভবত লোকটির এই হাতে কিছুক্ষণ আগে একটি গু*লি বেঁধেছিল । লোকটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে যা বুঝলো । লোকটির বয়স আনুমানিক ৩০+এর উপরে তো হবেই হবে ।
মেয়েটির কান্না আর শয্যা করতে পারলো না পুরুষটি । দিল এক রাম ধমক :
…সমস্যা কি তোমার মেয়ে। কান্না করো কেন?
📖
আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে পরলো মেয়ে টি । এই লোক কি বললো ? কেন কান্না করছে । এই পুরুষ কি দেখতে পেল না , কিছু বয়স্ক লোক তাদের বিয়ে পরিয়ে দিল । এখন কি হবে এই লোকের কি কোনো চিন্তা নেই?
কান্নারত অবস্থাতেই মেয়েটি বিরবির করে বললো:
…আপনি ওনাদের কিছু বলবেন না। আপনার কোনো চিন্তা নেই । দেখুন আমার কেউ নেই । আমায় যেতে হবে। প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
অযথা কথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো লোকটি :
… এতো যদি তোমার চিন্তা তাহলে এই নৌংরা হোটেলে কি করো মেয়ে? এখানে ও তো কোনো না কোনো পুরুষ কে নিজের দেহ বিক্রি করতেই এসেছিলে ।
বোকা বোকা চাউনি দিয়ে শুধালো মেয়ে টি :
…মানে?এসব কি নোংরা কথা বলছেন আপনি? নোংরা হোটেল মানে ?
বিরক্ত হলো লোকটি । মুহুর্তের মধ্যেই নিজের ডান হাত দিয়ে মেয়েটির গলা পেঁচিয়ে ধরলো । এবং দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল:
…নৌংরা হোটেল বুঝিস না। মজা করিস আমার সাথে। তুই কি ভাবিস তোদের মতো মেয়েদের সাথে ফালতু কথা বলার সময় আছে আমার । তোদের ভাগ্যে ভালো আমার হাতে গু*লি লেগেছে। নয়তো সব কটাকে এখানেই পুঁতে দিতাম । শা* লি এখানে ছেলেদের সাথে নৌংরামি করতে এসেছিস আর আমার সাথে মজা করিস।
ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো মেয়েটি । এই পুরুষ এর এক হাতের থাবায় যেন তার প্রান যাবে । তবুও নিজেকে যতদুর সম্ভব শক্ত করে বলে উঠলো মেয়েটি:
…বি,বি,বিশ্বাস করুন ভাইয়া আমি জানি না এই স্থান সম্পর্কে। । এটা আমার অচেনা শহর। কিছুই চিনি না আমি এই শহরের। আহা প্লিজ ছেরে দিন আমায় লাগছে ।
পুরুষ টি ছেরে দিল মেয়েটিকে, মেয়েটির কথা শুনে নয় । বরং তিব্র মাথা ব্যাথায় ।
হাতের যন্ত্রণায় মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে তার। মনে হচ্ছে মাথা যেনো ফেটে যাবে। তার দ্বারা এখন বসে থাকাও মুস্কিল।
ছেলেটির হাত থেকে মুক্তি পেতেই প্রান পনে কাশতে থাকলো মেয়েটি। এতক্ষণে গলায় লাল বর্ণের হাতের ছাপ পড়ে গেছে । যদিও এসব তার কাছে নতুন কিছু নয়। ছোট বেলা থেকে কতো মার খেয়েছে হিসেবে নেই। এখন হয়তো আর কষ্ট হয় না ।
কিন্তু সকাল থেকে না খেয়ে থাকার দরুন আর দেহ শায় দিলো না । লুটিয়ে পরলো সেখানে।
••••••••••••••••
একটি জমজমাট বিয়ে বাড়ি। চার দিকে মিষ্টি আলো জ্বল জ্বল করছে। বসার ঘরের একটি সোফায় বসে আছেন বাড়ির কর্তা আমজাদ পাটোয়ারী। তার চোখে মুখে এক আকাশ পরিমাণ হাহাকার ও বিষন্নতা। তাকে ঘিরে আছে বাড়ির বাকি সদস্যরা।
মুহুর্তে ধরফরিয়ে প্রবেশ করল আবির পাটোয়ারী ও ঐশ্বর্য পাটোয়ারী। তাদের চোখে চরম ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। লুটিয়ে পড়লো বাবা আমজাদ পাটোয়ারীর পায়ের কাছে। ২৮+ ছুঁই ছুঁই ছেলেদের এমন কান্ডে বিচলিত হলেন না তাদের বাবা নামের প্রানি টি ।
বরং সান্তো স্বরে শুধালেন " আমার নূর মা রে পেলি ।
আবির আর ঐশ্বর্য চুপ করে বসে রইলো । কোনো উত্তর নেই তাদের কাছে । সকাল থেকে নূরজাহান কে চট্রগ্রামের প্রতিটি অলিতে গলিতে লোক লাগিয়ে খুঁজেছে ।
কিন্তু ফলাফল শূন্য। কেউ খবর দিতে পারেনি তার ।
আমজাদ পাটোয়ারী ছেলেদের নিরবতার মানে বুঝলেন। হাহাকার করে উঠলো তার বুকের ভিতরটা। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরলো আগুনের লাভার মতো নোনাজল।
এ তো তার কর্মের ফল। পুড়নো কথা মনে পড়তেই শব্দ করে কেঁদে উঠলেন তিনি।
পুরুষ রা নাকি কাঁদে না । এই তো বৃদ্ধ বয়সে এসে আমজাদ পাটোয়ারী কাঁদছেন।
আবির:__ আব্বাজান কান্না করবেন না। আপনার কান্না যে আমরা সইতে পারি না। বিশ্বাস করুন কালকের মাঝেই আমারা নূরজাহান কে এখানে নিয়ে আসবো ।
ঐশ্বর্য:__ হ্যাঁ বাবা আমরা আনবো ওই মেয়েকে । শুধু আপনি কান্না করবেন না।
আমজাদ পাটোয়ারী পরম যত্নে ছেলেদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন
__ একটা কথা মনে রাখবি । যুবক বয়সের একটা ভুলের পরিমাণ খুবই ভয়ংকর হয় । যার মূল্য সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় । এই দেখ না আমাকে ! আমার ফুলের মতো মেয়েটা সারাজীবন হাজার খানেক কষ্টের মাঝে বড়ো হলো । কিন্তু আমি হতভাগা পিতা কোনদিন তার দুঃখে সামিল হতে পারিনি।
আজ যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে তাকে একটু বুকে আকরে বাঁচতে চাইলাম। অভিমান নিয়ে চলে গেলো আমার কলিজার টুকরা টা ।
কিছুক্ষণ থেমে আবার বললেন: __আমার মেয়ে যে এখানকার কিছুই চেনে না । কি করছে আমার মেয়েটা ? কোই আছে ? কি জবাব দিবো আমি ওই খোদারে । নিয়ে আয় বাপ আমার মেয়েটাকে নিয়ে আয় ।
পাটোয়ারী বাড়ির দেওয়ালে বাজতে থাকলো এক বাবার হাহাকার। তিনি হয়তো তার কৃতকর্মের ফল পাচ্ছেন। কথায় আছে না " বিধাতা ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।"
একদিন না একদিন আপনার কর্মের ফল আপনি পাবেন । শুধু একটুখানি সময়ের অপেক্ষা।
______
প্রচন্ড আওয়াজে ঘুম ভাঙল একটি মেয়ের । চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো সে কোথায় ।
বুঝতেই পাড়লো না , সে কোথায়, কেনোই বা এসেছে ? ক্ষন কয়েকের মাঝেই মনে পড়লো আজকে তার সাথে ঘটা সমস্ত কিছু । শরীরে কাঁটা দিলো তার ।
তার তো বিয়ে হয়ে গেছে। ওই লোকগুলো জোর করে দিলো তার বিয়ে। তাহলে সে এখানে কেন? আর এই জায়গাটাই বা কোথায় ? যার সাথে তার বিয়ে হলো সেই বা কোথায়?;
📖
মেয়েটি আর ভাবতে পাড়লো না । বিছানা থেকে উঠে কোনো মতে ঘরের বাইরে বেড়ালো । বাড়িটা কেমন ভুতুড়ে। কালো মার্বেলের তৈরি ভয়ঙ্কর বাড়ি , যা তার ছোট্ট মনে আরো ভয় সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট।
নিচে নেমেই দেখলো বড়ো একটা ড্রইং রুম। নিরালস একটি স্থান। মনে হয় কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা হয়নি এই বাড়ি। তখনি নজরে এলো দরজা। হ্যাঁ এই বাড়ি থেকে বাহির হওয়ার দরজা । আর এক সেকেন্ড সময় অপচয় না করে দৌড় লাগালো সে দিকে । কিন্তু তার আগেই ভেসে আসলো একটি ভয়ঙ্কর কন্ঠস্বর
__ কোথায় পালানোর চিন্তা করছেন?
এটি কালো পোশাকে দাঁড়িয়ে আছে একটু পুরুষ । মেয়েটির পা থরথর করে কাঁপতে থাকলো । সামনের ব্যক্তিটি কে দেখে । এই তো সেই ব্যক্তি , যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তার। এ কোন নতুন বিপদে পড়লো সে। ভয়ের চোটে পিছাতে থাকলো মেয়েটি।
তখনি আবার সেই ভয়ঙ্কর কন্ঠ ভেসে আসলো।
" নাম কি তোমার বলো ? "
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বললো:__ নূর! নূরেজাহান ।
চলমান ______
#পর্ব_১
নাম এখনো ঠিক করি নাই।।
[গল্পটি আপনাদের ভালো লাগলে continue করবো । তাই গঠনমূলক মন্তব্য দিতে ভুলবেন না ]
📖
No comments:
Post a Comment