গল্পের ভান্ডার :/
চায়ের কাপের গল্প (সম্পূর্ণ)
চায়ের কাপের গল্প (সম্পূর্ণ)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষ। প্রতিদিন সকাল নয়টার ক্লাস। ব্যস্ত ক্যাম্পাস, দৌড়ঝাঁপ, ক্লাসের নোট, সেশনজাম আর টিউশনি—এই নিয়েই দিন কেটে যায়।
অর্ণব ছিল অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। সে চুপচাপ, নিজের জগতে ডুবে থাকা ছেলে। মাথায় সবসময় একটা বই, একটা গানের লাইন কিংবা দার্শনিক কোন প্রশ্ন ঘোরে। বন্ধুবান্ধব খুব বেশি নেই। ক্লাসে কারো সাথে তেমন কথাও বলে না।
অন্যদিকে আয়েশা ছিল ঝলমলে, প্রাণবন্ত। ওর হাসি ছিল এমন, যা দেখলে মনে হতো চারপাশের গরম, ক্লান্ত দুপুরটা এক নিমিষেই শীতল হয়ে গেছে। ও ক্লাসে প্রশ্ন করত, তর্ক করত, টিচারদের হাসিয়ে ফেলত, আবার বন্ধুদের আড্ডায় প্রাণ দিত।
অর্ণব প্রথম ওকে লক্ষ্য করেছিল একটা প্রেজেন্টেশনের দিন। সবাই যখন নার্ভাস, আয়েশা তখন স্টেজে উঠে বলল, “প্রেজেন্টেশনে ভুল হলে ক্ষমা করে দিয়েন, আমার মা বলেন, ভুল না করলে মানুষ শেখে না।” সবাই হেসে উঠেছিল, এমনকি কঠিন মেজাজের স্যারও।
এরপর একদিন টং দোকানে অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটা চায়ের কাপ। আয়েশা এসে হঠাৎ ভুল করে তার কাপটা নিয়ে ফেলে দিল। কাপ পড়ে ভেঙে গেল, গরম চা ছিটকে পড়ল অর্ণবের হাতেও।
"ওহ! আমি—আমি দুঃখিত!" – বলেই আয়েশা ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করল।
অর্ণব হেসে বলল, “চা গেলে কিছু যায় না, আপনি হাসলেন – এতেই দিনটা ভালো হয়ে গেল।”
সেই দিন থেকেই শুরু।
প্রথমে চায়ের কাপের পাশে বসা। তারপর একসাথে ক্লাসে যাওয়া। বৃষ্টির দিনে ছাতা ভাগাভাগি করা। কেউ কারো প্রেম স্বীকার করেনি, কিন্তু সময় জানিয়ে দিচ্ছিল—তারা একে অপরের হয়ে উঠছে।
অর্ণব আয়েশাকে বলত, “তোমার চোখে নদীর মত কিছু আছে। চুপ করে তাকিয়ে থাকলে মনে হয়, হারিয়ে যাব।”
আয়েশা বলত, “তুমি অনেক গভীর। কখনও কখনও ভয় পাই—এই গভীরতায় যদি ডুবে যাই?”
একদিন আয়েশা বলল, “তুমি চুপচাপ কেন থাকো?”
অর্ণব হেসে বলল, “তোমার সব শব্দ শুনতে চাই বলেই আমি চুপ থাকি।”
দিন যায়, মাস যায়। ক্যাম্পাসের শেষ বর্ষ চলে আসে। সবার মাথায় চাকরি, মাস্টার্স, বিদেশ যাওয়া নিয়ে চিন্তা। আয়েশা জানায়, সে কানাডায় মাস্টার্সে স্কলারশিপ পেয়েছে। চোখে জল নিয়ে বলে,
“তুমি কিছু বলবা না?”
অর্ণব মাথা নিচু করে বলে, “তোমার স্বপ্ন আমার চেয়ে অনেক বড়। আমি চুপ থাকি, কারণ তোমাকে থামাতে চাই না।”
বিদায়ের দিন, লেকপারে বসে আয়েশা বলে,
“তোমাকে চুমু দিতে ইচ্ছে করছে। তবে দেই না, কারণ এই মুহূর্তটা স্মৃতি হয়ে থাকুক, বাস্তব না।”
অর্ণব চুপ করে বসে থাকে। আয়েশা বলে,
“তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?”
অর্ণব বলে,
“প্রতিদিন চায়ের কাপে যতটা চিনি মেশাই, তার চেয়েও বেশি তোমাকে ভালোবাসি।”
আয়েশা চলে যায়। অর্ণব থাকে। টং দোকানের সামনে এখনো সে একা বসে। হাতে এক কাপ চা। দু’টা কাপ নয়।
তবে চা আজও সে এক কাপ বেশি নেয়।
এই ছিল তাদের গল্প। নিঃশব্দ ভালোবাসা, চায়ের কাপে জমে থাকা অনুভূতি, আর স্মৃতির মতো রয়ে যাওয়া অপেক্ষা।
গল্পের শেষ পরিণতি কার কার লাগবে কমেন্ট করে জানাও। খুব শীঘ্রই শেষ পরিণতি আসছে।
No comments:
Post a Comment