Tuesday, December 10, 2024

চিঠি::এক অদ্ভুত শুরু

 

 এক অদ্ভুত শুরু**



চিঠি: এক অদ্ভুত শুরু

নদীর ধারে একটি ছোট্ট গ্রাম, যেখানে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকে। সেখানেই আরিফ থাকে, যাকে গ্রামের সবাই চেনে তার শান্ত স্বভাব আর নির্লিপ্ত জীবনযাপনের জন্য। কিন্তু আরিফের একটি বিশেষত্ব আছে—সে চিঠি লিখতে খুব ভালোবাসে। আরিফের কাছে চিঠি লেখা মানে নিজের মনের গভীর কথা কাগজে তুলে ধরা।

একদিন বিকেলের দিকে আরিফ তার লেখা একটি চিঠি হাতে নিয়ে গ্রামের পোস্ট অফিসে যায়। পোস্ট অফিসে কাজ করে তানিয়া—যে সদ্য শহর থেকে গ্রামে বদলি হয়ে এসেছে। তানিয়া প্রাণোচ্ছল, সদাহাস্য। চিঠি হাতে নিয়ে সে আরিফকে জিজ্ঞেস করল,
"এই চিঠি কাকে পাঠাতে চান?"
আরিফ একটু হকচকিয়ে গেল। সত্যি বলতে, চিঠিটি কারও নির্দিষ্ট ঠিকানায় লেখা ছিল না। চিঠিতে লেখা ছিল,

"কখনও কখনও মনে হয়, আমাদের জীবনে এমন একজন থাকা উচিত যার কাছে মন খুলে সব বলা যায়। অথচ বলতে গেলেই ভাষা হারিয়ে ফেলে মন। যদি তুমি সেই একজন হও, তবে আমি লিখে যেতে চাই তোমার জন্য।"

তানিয়া চিঠিটি পড়ে একটু থমকে গেল। এরপর হেসে বলল,
"ঠিকানা ছাড়া চিঠি কখনও পাঠানো যায়
? তবু আমি পড়লাম। তুমি কি আমার কাছে আরেকটি চিঠি লিখবে?"


চিঠির বন্ধন

সেদিনের পর থেকে আরিফ আর তানিয়ার মধ্যে নিয়মিত চিঠি বিনিময় হতে লাগল। তারা কখনও নিজেদের নাম লিখত না, শুধু অনুভূতি প্রকাশ করত। প্রতিটি চিঠিতে তারা নিজেদের জীবনের ছোট ছোট গল্প, স্বপ্ন, দুঃখ, এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা শেয়ার করত।**

তানিয়া একদিন লিখল:
"প্রতিদিন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হয়, আমি যেন তোমার নতুন চিঠির অপেক্ষায় আছি। তোমার চিঠি আমাকে মনে করিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সৌন্দর্য কেমন।"

আরিফ উত্তর দিল:
"তোমার অপেক্ষায় থাকা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি জানি না, আমাদের এই বন্ধন কোথায় যাবে, কিন্তু এটা জানি—এই বন্ধনে আমি বেঁচে আছি।"


বাস্তবের কাছে আসা

কিছুদিন পর, একটি বিশেষ চিঠিতে তানিয়া আরিফকে বলল,
"চলো আমরা একবার দেখা করি। আমি জানতে চাই, কাগজের বাইরে তুমি কেমন মানুষ?"

আরিফের মন হঠাৎ ছন্দ হারাল। এতদিন চিঠির আড়ালে থাকা অনুভূতিগুলো সরাসরি প্রকাশ করতে হবে। সে সাহস করে একটি নির্দিষ্ট দিনে নদীর ধারে তানিয়াকে দেখা করার কথা জানাল।

নির্দিষ্ট দিনে তারা দেখা করল। তানিয়া তার স্বভাবসুলভ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, আর আরিফ ছিল কিছুটা নার্ভাস। তবে তাদের কথাগুলো সহজেই প্রবাহিত হতে লাগল, যেন তারা অনেক বছর ধরে পরিচিত।


শেষ চিঠি

তানিয়া একদিন আরিফকে বলল,
"তোমার লেখা চিঠিগুলো আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু আমি চাই আমাদের এই অনুভূতিগুলো শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ না থেকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ুক। তুমি কি চাও আমরা একসঙ্গে থাকি?"

আরিফ সেই সন্ধ্যায় তানিয়াকে তার শেষ চিঠিটি দিল:
"আমার জীবনের সমস্ত চিঠি তোমার কাছেই পৌঁছতে চেয়েছে। তুমি যদি আমার সঙ্গ দাও, তাহলে আমি লিখে যাব তোমার জন্য পুরো জীবন।"

তানিয়া সেই চিঠি পড়ে হেসে বলল, "এবার লিখতে হবে না, শুধু বলো—আমি আছি।"


এইভাবেই চিঠির মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তাদের ভালোবাসা এক সুন্দর বাস্তবতায় রূপ নিল। তারা নিজেদের জীবনকে কাগজের চিঠির মতোই সুন্দর করে তুলল।

আপনার যদি আরও কিছু যোগ করার ইচ্ছা থাকে, বলুন!**

No comments:

Post a Comment

🌿 চুল পড়া বন্ধ করুন প্রাকৃতিক হেয়ার অয়েলে

🌿 ঘরে বসেই তৈরি করুন হারবাল হেয়ার অয়েল – ঝলমলে চুলের সহজ উপায়।