Wednesday, December 11, 2024

সাদা কাঠগোলাপ

 সাদা কাঠগোলাপ 🍁

লেখিকা: তানজিনা কনা

পর্ব-০১

আজও ঘুম থেকে উঠে মোবাইলের মেইল অপশন শূন্য দেখে হৃদয় ভাঙল ছাব্বিশ বছর বয়সী রমনী "কিয়ার আক্তার কান্নু"-র

"যদি সে আমাকে নাই পোড়াই তাহলে কিসের ভালোবাসলাম আমি"

মোবাইল বিছানার পাশের বেড সাইড টেবিলে রেখে ফ্রেশ হয় রুমের বাহিরে আসল। গন্তব্য আম্মুর রুম,সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাসিমুখ না দেখলে দিন শুরু হতে চাইনা তার।


মোবাইলে আজকেও সেই কাঙিত আইডি থেকে পাওয়া শব্দগুচ্ছ গুলো পড়তে লাগল,বত্রিশ বছর বয়সী সুদর্শন পুরুষ "তাকদির ইয়াকুব আলী।কিন্তু আজও কোন প্রতিক্রিয়া দেখাল না সে।

"আপনার যে আরও অন্তর্দহন করা এখনও বাকি "বাটারকাপ"।তাকদির ইয়াকুব-এর হৃদয়ে যার বসবাস সে এত তাড়াতাড়ি ভাঙলে চলবে?"

🍁

কিয়ার কান্নু,বয়স ছাব্বিশ বছর। বাবা মোঃ কাজিম কাবির, মা জিয়ারনা জাবিরা।ছোট বোন জিনার কান্তা,অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী সে,ইংলিশ নিয়ে পড়াশুনা তার।কিয়ার শ্যামবর্ণের মায়াবী একজন।বয়স ছাব্বিশ হলেও তার বয়স যেন সতেরো-আঠারোতে আটকে আছে।গ্রাজুয়েশন শেষ তার, তবুও এখনও বাহিরে গেলে কেউ বিশ্বাস করতে চাইনা আসলেই তার গ্রাজুয়েশন শেষ।এইতো সেই দিনের ঘটনা আম্মুর সাথে জিনারের ক্যাম্পাসের বাহিরে বসে ছিল,পাশে বসা একা আন্টির প্রশ্ন 

"ভাবি আপনার মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে?"

জিয়ারনা জাবিরা যখন উত্তর দিলেন,তার মেয়ে মাস্টার্স শেষ করে পিএইচডি এর প্রস্তুতি নিচ্ছে মহিলাটি যেন আকাশ থেকে পড়লো এমন ভাব, এরপর তাদের সাথে আর কোন প্রকার কথাই বলল না।

"আশ্চর্য "


তাকদির ইয়াকুব বত্রিশ বছর বয়সের শুভ্র সুদর্শন পুরুষ।বাবা ইবাদ ইদরাক, মা নাজিরা নাবিহান।তিন ছেলে মেয়ে তাদের।নাজাত নাহান মেজ মেয়ে, ছোট ছেলে ইকমাল ইরশাদ এবং বড় ছেলে তাকদির ইয়াকুব যে বর্তমানে জাপানে নিজের কাজের জন্য অবস্থানরত।তাকদির পড়াশোনা শেষ করে জাপানের একটি কলেজের প্রফেসর হিসেবে কাজ করছে বর্তমানে। নাজাত নাহান বর্তমানে শ্বশুর বাড়িতে,এবং ইরশাদ একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।


প্রতিদিনের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলো কিয়ার এবং জিনার।জিনার যে কলেজে অনার্সের ছাত্রী কিয়ার সেখানেই পাশে একটি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের ম্যাথমেটিক্স এর শিক্ষিকা।

"আব্বু আজকে এত তাড়াতাড়ি বাসায়"

অবাক হয়ে জানতে চাইলো জিনার।

"তোমাদের আম্মু তোমরা বাসায় না থাকলে যে কেমন করে তোমরা জানো না।"

"আম্মু মোটেও আমার জন্য এমন করেনা, করে তার বড় মেয়ের জন্য।"

"হ্যাঁ তো আপনাকে বলছে।"

"সত্যি তুই যখন বাসায় থাকিস না আমার মাথা শেষ করে দেয় তোমার প্রাণ প্রিয় আম্মু।"

"আমার আম্মু তোর কি হয়? "

"আম্মুই হবে হয়তো।"

"আম্মু শুনলে তুই শেষ আমার আদরের বোন।"

জিয়ারনা জাবিরা মেয়েদের জন্য খাবার রেডি করতে ব্যস্ত এই সবে আপাতত তার খেয়াল নেই, এগুলো এই বাসার প্রতিদিনের চিত্র।


টেবিলে খাবার খাওয়ার সময় কলিংবেলের আওয়াজে বেশ বিরক্ত জিনার।জিয়ারনা জাবিরা গেট খুলতে গেলেন ব্যস্ত হাতে।দরজার অপর পাশে দেখতে পেলেন তার ভাসুর ইবাদ ইদরাক এবং ভাবি নাজিরা নাবিহানকে।তিনি সালাম দিয়ে তাদের ভিতরে আসতে বললেন।

"বিকেল চারটায় দুপুরের খাবার খাচ্ছ কেন আম্মু?" জানতে চান নাজিরা নাবিহান।

"বড় আম্মু তোমাদের আদরের কিয়ারের জন্য এই অবস্থা আমার, ক্লাস শেষ ১.৩০ টাই অথচ তার স্টুডেন্টরা তাকে ছাড়তে চায় না। "

"কেন আবার কি হলো?"

"ক্লাস শেষ করে সবাই তার কাছে আবার এক্সট্রা বুঝার জন্য আসছিল।আমি বুঝিনা ক্লাসে ক্লাস নেওয়ার পরও এত কষ্ট করার কি আছে?"  

"কান্নু কোথায়?"

''কই আর গোসলে।"

নাজিরা নাবিহান এবং জিয়ারনা জাবিরা কথা বলতে বলতে ভিতরে গেলেন। দুই ভাই ইবাদ ইদরাক এবং কাজিম কাবির একসাথে আগেই বারান্দায় বসেছেন ব্যবসার আলোচনায়।


ইবাদ ইদরাক এবং কাজিম কাবির তিন ভাই।দুই ভাই একই বিল্ডিং এর চার-পাঁচ তালায় থাকেন। কোন কারনে ছোট ভাই তাদের সাথে থাকেন না। দুই ভাই একই সাথে প্রিন্টিং ফ্রেস সামলান। তবে একসাথে না থেকে আলাদা আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত ইবাদ ইদরাকের।বিয়ের পর থেকেই দুই ভাই আলাদা থাকেন। এতে করে পরিবারের ঝামেলা কম হয়,ওনার ধারণা একসাথে অনেকগুলো বাসন থাকলে আওয়াজ হবেই।


আজকে রাতের খাবার সবাই চতুর্থ তালায় করার কথা বললেন জিয়ারনা জাবিরা। মাঝেমধ্যে দুই ভাইয়ের পরিবার একসাথে খাওয়া দাওয়া করেন।

"বড় আম্মা ক্লাস কেমন চলছে?" 

"ভালো বড় আব্বু।"

"বড় আব্বু তুমি ওকে কি জিজ্ঞেস করো, আমাকে জিজ্ঞেস করো ওর ক্লাস কেমন চলে? "

রাগ করে কথাটি বলে উঠল জিনার।

"আমার ছোট আম্মাজানের এত মেজাজ খারাপ কেন আজকে?"

"তোমাদের আদরের কিয়ার-এর জন্য আর কার জন্য?"

"আমি আবার কি করলাম?"

অবাক হওয়া কন্ঠে বলে উঠল কিয়ার।

"বড় আব্বু কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে গাধার খাটুনি খাটে সে।আমারও কোন কথা শুনতে চায়না।সবাই তাকে দিয়ে কাজ করাই আর সেও বলদের মতন সবার কাজ করে দেয়।"  

ওদের কথার গুরুত্ব না দিয়ে জিয়ারনা জাবিরা বললেন-

"ভাবি ইরশাদ কোথায়? এখনো আসলো..... "

ওনার সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার আগেই কলিংবেলের শব্দ কাজের মেয়ে মিনা দরজা খোলার সেকেন্ডে তড়িৎ  বেগে ভিতরে প্রবেশ করল ইরশাদ।ইরশাদ এসেই মায়ের উদ্দেশ্য বলল-

"আম্মু ভাইয়া কাল সকাল সাতটার ফ্লাইটে আসবে।"

এই একটা কথায় বেশ চমকিত হলেন সকলে।

"তুমি কিভাবে জানো?"

"ভাইয়া দশ মিনিট আগে ফোন দিয়ে বলল।"

"কতগুলো বছর পর আমার ছেলে আসবে" কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন নাজিরা নাবিহান। সকলে বেশ উত্তেজিত একে অপরের সাথে কথায় ব্যস্ত।

এদিকে কারো যেন নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত আটকে আসছে।

"ছয় বছর।"

এতগুলো বছর পর মানুষটা আসবে কি হবে?আখিঁ দুটি পানিতে টইটুম্বর। নীরবে সকলকে রেখে চলে গেল সে।যা জিনার ছাড়া আর কেউ খেয়াল করলে না।


রূমে এসে কিয়ার অশ্রু বিসর্জনে ব্যস্ত।প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মানুষটাকে একটা করে মেসেজ পাঠানো তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। কালকে যখন মানুষটা এখানে আসবে তখন আজকে কি মেসেজটা দেওয়া ঠিক হবে? মানুষটার সামনে দাঁড়াবে কি করে? মানুষটা যদি এসে জিজ্ঞেস করে এগুলোর মানে কি? তখন কি জবাব দেবে এ সকল কিছু চিন্তা করে সে আজকে আর কিছুই লিখল না।


"এবার তো আমাকে বিয়েটা করবেন জংলী বিল্লী?"

সকলের চোখ এড়িয়ে কথাটি জিনারকে বলল ইরশাদ।

"আগে ভাইজান-আপু এক হোক,পড়ে ভেবে দেখব।"

ইরশাদ এবং জিনার দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তারা তিন বছর পর্যন্ত রিলেশনশিপে আছে।ইরশাদ বারবার জিনারকে বিয়ের কথা বললেও জিনারের এক কথা ভাইয়া আপু এক হওয়ার আগে সে কোনভাবেই বিয়ে করবে না।চলবে...

No comments:

Post a Comment

📖 সেই খামখেয়ালি ভালোবাসা

গল্পের সম্ভার ; 📖 সেই খামখেয়ালি ভালোবাসা ✦ ১ম পর্ব :  নতুন ঠিকানায়, নতুন গল্পে মেহরিন ক্লাস নাইনে নতুন ভর্তি হয়েছে শহরের বিখ্যাত ‘বিকাশ ব...